মাদকাসক্তি থেকে নিরাময়ের কিছু টিপস – বর্তমানে চলমান অনেক সামাজিক ব্যাধির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাধি হল মাদকাসক্তি। অনেক পরিবারই এই ব্যাধির ভুক্তভোগী। একটি পরিবারের কোন একজন ব্যক্তি মাদকাসক্ত হলে, তা শুধু ঐ ব্যক্তিকেই নয় বরং পুরো পরিবারকেই নানারকম সমস্যার সম্মুখীন করে তোলে। আর এই সমস্যাগুলো থেকে উঠতে গেলে প্রথম যা দরকার সেটা হল, মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের কোনো ব্যক্তি মাদকাসক্ত হলে, পরিবার তার আরোগ্যের জন্য তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করে দেয়। কিন্তু এমন অনেক পরিবার আছে যারা অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল অথবা তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিই হয়তো মাদকাসক্ত। সেক্ষেত্রে তারা হয়তো মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করতে পারছে না। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে, মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাদকের আসক্তি থেকে মুক্ত হতে পারে। আবার এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা নতুন নতুন আসক্তিতে জড়িয়ে পরেছে। কিন্তু তারা চায় আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে, পরিবারকে কষ্ট না দিতে।এইসমস্ত পরিস্থিতিতে, যে উপায় বা পদক্ষেপগুলো আপনাকে মাদকাসক্তি থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করবে, সেইরকম কিছু উপায় এখানে তুলে ধরা হল:

১) মেনে নিন আপনি অসুস্থ

মাদকাসক্তি থেকে নিরাময়ের প্রথম উপায়ই হচ্ছে, আপনাকে মেনে নিতে হবে আপনি অসুস্থ অথবা আপনার একটি মারাত্মক সমস্যা আছে, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এবং সুস্থ হবার জন্য আপনাকে আপনার ভিতরে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করতে হবে।

২) আসক্তির নেতিবাচক দিকগুলো লিখে ফেলুন:

নেতিবাচক দিকগুলো লিখার একটা উদ্দেশ্য হল, এই তালিকা আপনাকে আপনার সমস্যা সমাধানে এবং ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়ে রাখতে সহযোগিতা করবে। তালিকাটি হতে পারে এমন-

-মাদকাসক্তির ফলে আপনার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে

-ভালবাসার সম্পর্কগুলো ভেঙে যাচ্ছে

-মানসিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন- হতাশা, দুঃশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে

-বিভিন্ন জায়গায় ধার করে মাদক গ্রহণে এখন আপনি লজ্জায় পড়ছেন, ইত্যাদি।

৩) ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি তালিকা তৈরি করুন:

মাদক ত্যাগ করলে আপনার জীবনে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেমন-

-আপনি স্বাধীন অনুভব করবেন

-আত্মীয় বা প্রিয়জনের সাথে সময় কাটাতে পারবেন

-অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন

-আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন, ইত্যাদি।

৪) কেন আপনি মাদক ত্যাগ করতে চান তার একটি তালিকা তৈরি করুন:

এটা করতে আপনি আপনার বন্ধু বা পরিবারের সহযোগিতা নিতে পারেন। এই তালিকা আপনাকে আপনার মনোবল বাড়াতে সহযোগিতা করবে। তালিকাটি হতে পারে এমন……”

মাদক নেওয়ার কারন…?

তামাক, ইয়াবা, গাঁজা,  ফেনসিডিল, হেরোইন, আফিম, মরফিন, এ সবই মাদক।

আরো-

(১) মাদকাসক্তির বড় কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা।

(২) বন্ধুদের চাপে পড়ে অনেকে মাদক নিয়ে থাকে।

(৩) বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকে মাদক গ্রহণ করে থাকে।

(৪) অনেকের মাঝে মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা থাকে যা তাকে ঠেলে দেয় মাদকের জগতে।

(৫) মানসিক সমস্যা যেমন: হতাশা, একাকীত্ববোধ, বিষণ্ণতার কারণে এসব থেকে রেহাই পেতে মাদককে বেছে নেয়।

(৬) এন্টি সোশ্যাল পারসোনালাটি, শৈশবে বিকাশে সমস্যা থাকলেও অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

(৭) ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে মাদক গ্রহণ করে।

৮) পারিবারিক কারণেও অনেকে মাদকে জড়িয়ে পড়ে।

৯) পারিবারিক কোলাহলে কারণে অনেক সময় মাদকে আসক্ত হয়ে থাকে।

১০) সহপাঠীদের চাপে পরে অনেকে মাদক নিয়ে থাকে।

মনোভাব

কখন বুঝবেন যে আপনার নিজেকে একটু একটু করে বদলানোর চেষ্টাগুলো সফল হয়েছে ?

১ – আপনি আপনার চঞ্চলতাকে ভুলে; অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছেন।

২ – আপনি বুকের ভেতর কষ্ট চেপে; দিব্যি ভালো থাকার নিয়মে চলতে পারেন।

৩ – কাউকে বারবার বোঝানোর চেয়ে; তার কথা গুলোই চুপ করে শোনেন।

৪ – আপনার জীবন থেকে; হারানো মানুষ গুলোকে নিয়ে আফসোস করেন নাহ।

৫ – কেউ আপনার সামনে অভিনয় করছে বুঝতে পেরেও; তাকে চুপচাপ সহ্য করেন।

৬ – যেখানে এক-দুই কথাতে তর্কে জড়াতে পারেন; সেখান থেকে লুকিয়ে ফিরে আসেন।

৭ – পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে; মন খারাপ করাটা আপনার বিরক্তিকর মনে হয়।

৮ – কেউ আপনাকে বুঝবে; সেই আশা ছেড়ে নিজের

ভালো লাগাকে একাই গুরুত্ব দেন।

৯ – জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব; কষাকষি নিয়ে আর বসতে চান নাহ।

১০ – আগ বাড়িয়ে কারো সাহায্য করা ছেড়ে দিয়েছেন! কেউ চাইলে; শুধু তখনই সাহায্য করেন।

১১ – কারো কাছেই নিজের ইচ্ছে; ভালো লাগাকে প্রকাশ করতে চান নাহ।

১২ – কারো উপর অভিমান করেন নাহ; অভিযোগ করাও ছেড়ে দিয়েছেন।

১৩ – শোরগোলের চেয়ে; নীরব পরিবেশ’টা উপভোগ করেন।

১৪ – আপনি সহজে কাউকে বিশ্বাস করেন নাহ; কারো অনুভূতি গুলোকে প্রশ্রয় দেন নাহ।

১৫ – নতুন কোন মানুষকে আপন করতে চান নাহ; নিজেকে নিয়েই ভালো থাকার চেষ্টা চালিয়ে যান।

১৬ – মানসিক চিন্তার কারণ; হতে পেরে ভেবে! সব কিছুতেই সমঝোতা করতে রাজি থাকেন।

১৭ – একাকিত্ব’টা কে; আপনার সাথে মেনে এবং মানিয়ে নিতে পারেন।

১৮ – আপনার এখন সহজে মন খারাপ হয় নাহ; কান্না’টা প্রায় ভুলেই গিয়েছেন।

১৯ – সব প্রশ্নের উত্তর; শুধু একটা হাসি দিয়েই প্রকাশ করে দিতে পারেন।

২০ – ভালোবাসার মানে খোঁজা বাদ দিয়ে; ভালো থাকার কারণ গুলোতেই মনোযোগ আপনার।

জন্ম থেকেই মানুষ প্রতিনিয়ত নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে বেড়ায়; নানান আঘাত-প্রতিঘাতে সহ্য করতে করতে; একসময় মানুষ ক্লান্ত হয়ে যায়। অন্যের কারণে, বারবার নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টায় একদিন একেবারেই শান্ত হয়ে যায়।

দুঃখ-কষ্টের কাছে বারবার পরাজিত হয়ে, নিজেকে বদলাতে বদলাতে; এমন একটা অবস্থানে মানুষ চলে আসে, যেখান থেকে নিজেকে নতুন করে বদলানোর মতন আর কিছু

মাদকাসক্তি চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করুন

By newneer

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *